বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০

সচেতনতা ও আল্লাহর সাহায্য চাই : করোনাভাইরাস কোভিড-১৯

সাম্প্রতিক সময়ে চিনে উৎপত্তি লাভ করা করোনাভাইরাস নামক একটি রোগ সমগ্র বিশ্বকে আতঙ্কিত করে তুলেছে। করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায়নি। ঠিক কীভাবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরু হয়েছিল তা এখনও নির্ভুলভাবে চিহ্নিত করতে পারেননি বিশেষজ্ঞরা।

মিডিয়ার তথ্যানুসারে, চীনের উহানে গত ডিসেম্বর মাস থেকে শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৫ হাজার জনের বেশী ব্যক্তির মৃত্যু ঘটেছে এবং এক লাখ ২৪ হাজারের বেশি রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে।


জ্বর দিয়ে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়, এর পরে শুকনো কাশিও দেখা দিতে পারে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হালকা ঠাণ্ডা লাগা থেকে শুরু করে মৃত্যুর সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে বলে মনে করেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি করার কথা বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

করোনা মোকাবেলায় রিতিমতো হিমশিম খাচ্ছে বিশ্ব। এ পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্যমতে, বাংলাদেশে বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত আছে ২১৮ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ২০ জন। নিশ্চিতভাবে বলা যায় দেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ আরও মহামারী আকার ধারণ করতে যাচ্ছে।

ঠিক এই মুহুর্তে চাই অনেকবেশী সতর্কতা, আর আল্লাহর সাহায্য। আমরা সতর্ক কীভাবে হতে পারি? প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে সংক্রমন প্রতিরোধে বিচ্ছিন্নকরণ (quarantine) ব্যবস্থার নির্দেশনা প্রদান করেন আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.)।

আমি পাঠকদের সুবিধার্থে একটি হাদিস উল্লেখ করছি- হযরত আবূ হুরাইরা (রা) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সংক্রমনের অস্তিত্ব নেই। তখন এক বেদুঈন বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আমার উটগুলো হরিনীর ন্যায় সুস্থ থাকে। এরপর একটি চর্মরোগে আক্রান্ত উট এগুলোর মধ্যে প্রবেশ করার পরে অন্যান্য উটও আক্রান্ত হয়ে যায়।

তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাহলে প্রথম উটটিকে কে সংক্রমিত করল? (বুখারী, আস-সহীহ ৫/২১৬১, ২১৭৭; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৭৪২। তখন রাসূল (স.) বল্লেন তোমরা কখনও অসুস্থকে সুস্থদের মধ্যে নেবে না। কেননা ওই অসুস্থ পশু, পাখি, মানুষ দ্বারা অন্য কেউ আক্রান্ত হতে পারে।

তাই সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। বর্তমান চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের পরামর্শক্রমে সম্প্রতি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে যে সকল নির্দেশনা কর্তৃপক্ষ দিচ্ছেন তা আমাদের সকলের মেনে চলা একান্ত দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই আসুন এই মহামারি থেকে নিজে তথা নিজের পরিবার পরিজন, সমাজ, দেশকে বাঁচাতে হলে আমাদের কে অনেক বেশি সতর্ক থাকার পাশাপাশি কর্তৃপক্ষ যখন যে নির্দেশনা দেয় তা মেনে চলার অনুরোধ করছি।

আচ্ছা বলুন তো আমরা যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করি, আল্লাহকে ভয় করি তারা কি কেবলই সতর্ক থাকলেই হবে? নাকি সতর্ক থাকার পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য ও প্রার্থনা করতে হবে? হ্যা, আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকার পাশাপাশি মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে সাহায্য চাইতে হবে। আসুন আমরা কিভাবে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবো শিখে নেই আমাদের শিক্ষক মানবতার কান্ডারী প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ (স.) এর কাছ থেকে-

আল্লাহ মানুষকে তাঁর কাছে চাইতে, দোয়া ও প্রার্থনা করার নির্দেশ দিয়েছেন। দোয়াকে ইবাদতের মর্যাদা দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমাদের প্রভু বলেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৬০)। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৪৮১)

মুমিনের দায়িত্ব হলো, আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা। ছোট-বড় সব প্রয়োজনের জন্য দোয়া করা। আল্লাহ প্রার্থনাকারীকে পছন্দ করেন। প্রার্থনা না করলে তিনি রাগ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে না, তিনি তাঁর ওপর রাগান্বিত হন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৩৭৩)।

এখন বিশ্বব্যাপি মহামারি চলছে, নিশ্চই এটি আল্লাহ এমনি এমনি দেননি, এটি আমাদের দুই হাতের কামাই, আমরা অনেক বেশি অন্যার করেছি তাই আল্লাহ অখুশি হয়ে আমাদের উপর এমনটি করেছেন। তাই আল্লাহর কাছে প্রচন্ড আশা নিয়ে সাহায্য চাইতে হবে যাতে আল্লাহ খুব দ্রুত আমাদের এই কঠিন সময় থেকে পরিত্রান দেন। রাসূল (স.) শিখিয়েছেন, তার উম্মতকে তোমরা প্রচণ্ড আশা নিয়ে দোয়া করো।

তিনি বলেন, দোয়া কবুল হওয়ার আশা নিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করো। জেনে রাখো, নিশ্চয় আল্লাহ উদাসীন ও অমনোযোগী অন্তরের দোয়া কবুল করেন না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৭৯)।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা ছিল সৎকাজে প্রতিযোগী, তারা আশা ও ভয় নিয়ে আমার প্রার্থনা করত। তারা ছিল আমার প্রতি বিনীত।’ (সুরা: আম্বিয়া, আয়াত: ৯০)। তাই পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলবো, এই কঠিন মুহুর্তে আল্লাহর কাছে বিনয়চিত্তে ক্ষমা প্রার্থনাসহ এই কঠিন মুহুর্তে নিজে এবং নিজের দেশকে হেফাজতের জন্য দোয়া প্রার্থনা করতে হবে। তাহলে আল্লাহ আমাদের এই কঠিন মহামারি থেকে হেফাজত করতে পারেন।

লেখক: শিক্ষার্থী, দা’ওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম

ট্রাম্প ভারতের উপকার কোনদিন ভুলবে না

এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনা মোকাবিলায় হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানির সিদ্ধান্তের জন্য এ ধন্যবাদ জানালেন ট্রাম্প। অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে বন্ধুদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও নিবিড় করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন টাম্প। একইসঙ্গে বলেছেন, ভারতের এই দান কোনও দিন ভুলে যাবেন না তিনি। সেই সাথে সংকনকালীন সময়ে নেতৃত্বের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন ট্রাম্প।


হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রপ্তানির সিদ্ধান্তের জন্য ভারত ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভারতীয় সময় বুধবার রাতে টুইট করেছেন ট্রাম্প। টুইটে প্রধানমন্ত্রী মোদীকেও ট্যাগ করেছেন তিনি। করোনা মোকাবিলায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন সরবরাহের জন্য মোদীর কাছে আবেদন করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রথমে ভারত নিষেধ করে দিলে 'প্রত্যাঘাত' করার হুমকিও শোনা গিয়েছিল ট্রাম্পের গলায়। এই হুশিয়ারি দেওয়ার কয়েক ঘন্টার মাথায় ম্যালেরিয়ার এই ওষুধ রপ্তানির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা আংশিক প্রত্যাহার করে নেয় দিল্লি।

করোনাভাইরাসের কোনও টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। বিশ্বজুড়ে সেই চেষ্টাই চালাচ্ছেন গবেষকরা। সেই ক্ষেত্রে ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন চিকিৎসায় অনেকটা আশার ফল দেখাচ্ছে।

ইতালিয়ান অ্যাথলেট করোনায় প্রাণ গেল

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯):  ইতালিয়ান অ্যাথলেট করোনায় প্রাণ গেল। ইতালির সাবেক অলিম্পিক অ্যাথলেট দোনাতো সাবিয়া করোনাভাইরাসের(কোভিড-১৯) প্রাণ হারালেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে ইতালিয়ান অলিম্পিক কমিটি (কোনি)। এর কিছুদিন আগেই প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে বাবাকে হারান সাবিয়া।



এ ব্যাপারে এক বিবৃতিতে কোনি জানিয়েছে, সাবিয়া ৮০০ মিটার অলিম্পিকে দুবারের ফাইনালিস্ট ছিলেন। তিনি বেশ কিছুদিন ধরে দক্ষিণ ইতালি অঞ্চলের বাসিলিকাতার পোতেনজায় স্যান কার্লো হাসপাতালে আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন।

এদিকে সাবিয়ার মৃত্যুতে ইতালিয়ান অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন জানায়, ‘এটা শোকের ভেতর আরো বড় শোক আমাদের জন্য। দোনাতো এমন একজন মানুষ যাকে ভালো না বেসে উপায় নেই। তিনি যতটাই না প্রতিভাবান অ্যাথলেট, তার চেয়ে বেশি ভালো মানুষ ছিলেন।’

এসময় ইতালিয়ান অ্যাথলেটিক ফেডারেশন দোনাতো সাবিয়াকে একজন এক্সেট্রা অর্ডিনারি ট্যালেন্টেড অ্যাথলেট হিসেবে অভিহিত করেছে। সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন ভদ্র মানুষ।

করোনাভাইরাসে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু যে দেশ, সেই ইতালিতে কখন কার ডাক আসে- সেটাই যেন এখন একটা অনিশ্চিত বিষয় হযে দাঁড়িয়েছে। পুরো দেশের সমস্ত জনগোষ্ঠিই এখন নিজের মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

করোনা (কোভিড-১৯) নিয়ে রাজনীতি করা আগুন নিয়ে খেলার সমান: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

করোনা (কোভিড-১৯) নিয়ে রাজনীতি করা আগুন নিয়ে খেলার সমান: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। করোনা নিয়ে রাজনীতি করলে এর ফল মারাত্মক হতে পারে, এমনভাবেই আমেরিকাকে সতর্ক করলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস।

করোনাভাইরাস, এই একটি নামে এখন কাঁপছে গোটা বিশ্ব। দুনিয়া জুড়ে রীতিমতো ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেছে মারণ ভাইরাস, বিশ্বে কমপক্ষে ৮৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে ভয়ঙ্কর এই রোগে, আক্রান্ত ১৪ লক্ষেরও বেশি। এই পরিস্থিতিতেও চোখ রাঙানো বন্ধ হয়নি আমেরিকার।
করোনা (কোভিড-১৯) নিয়ে রাজনীতি করা আগুন নিয়ে খেলার সমান: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 
 
মঙ্গলবারই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিলে টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে বলে হুঙ্কার ছাড়েন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, এরপরেই যোগ্য জবাব দেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান।

বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলন করে তিনি জানান, ‘করোনা ভাইরাস নিয়ে রাজনীতি করা থেকে দূরে থাকুন। দল, আদর্শ ও ধর্মীয় ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠুন। করোনা নিয়ে রাজনীতি করবেন না, এটা আগুন নিয়ে খেলার সমান হবে।’

তিনি বলেন, ‘যেখানে সামান্য ফাঁক থাকবে সেখান দিয়েই ভাইরাস ঢুকে আমাদের এই যুদ্ধে হারিয়ে দিতে পারে। কোনও দেশের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা যতই ভাল হোক না কেন, জাতীয় ঐক্য ছাড়া, গোটা বিশ্বের ঐক্য ছাড়া এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করা কঠিন।’

তিনি আরো বলেন, ‘যদি বেঁচে থাকেন তবে রাজনৈতিক দলগুলোর হয়ে বিরোধিতা করার জন্যে, নিজেদের প্রাসঙ্গিকতা প্রমাণ করার জন্যে আরও অনেক সময় পাবেন, দয়া করে এই ভাইরাসটিকে রাজনীতির অস্ত্রে পরিণত করবেন না।’

এর আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে চিনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, এমন বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তিনি। প্রয়োজনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তহবিল হ্রাস করারও হুমকি দেন ট্রাম্প।

তিনি নিজের ক্ষোভ উগরে দিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতি এবার ‘কঠোর অবস্থান’ নেবে আমেরিকা। উল্লেখ্য, আমেরিকার থেকেই নিজেদের স্বাস্থ্য তহবিলে বড় অঙ্কের অর্থ সাহায্য পায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

রীতিমতো হুঙ্কার ছেড়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জন্যের বরাদ্দ তহবিলের পরিমাণ কমানোর ভাবনাচিন্তা করছি। যা পরিস্থিতি তাতে সবার আগে নিজের দেশ অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের কথাই সর্বাগ্রে চিন্তা করতে হবে।’

হোয়াইট হাউসে করা সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট প্রথমে বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে পাঠানো ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া হবে’, তার কিছু পরেই তিনি বলেন, ‘আমি বলিনি ফান্ড বন্ধ করে দেওয়া হবে। আমি বলেছি আমরা এই ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করে দেখব।’

তার এক মিনিট পর তিনি আরও বলেন, ‘আমি বলছি না যে আমি এটা করতে যাচ্ছি। আমরা তহবিলে অর্থ দেওয়া বন্ধ করার বিষয়ে বিবেচনা করছি।’ 

খবর: এনডিটিভি।

করোনাভাইরাস: বাংলাদেশের জন্য ‘ক্রিটিক্যাল’ সময় এপ্রিল মাস (কোভিড-১৯)

করোনাভাইরাস: বাংলাদেশের জন্য ‘ক্রিটিক্যাল’ সময় এপ্রিল মাস (কোভিড-১৯)। বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে কোভিড-১৯ পরীক্ষা বৃদ্ধির পাশাপাশি রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এপ্রিল মাসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ একদিকে যেমন সামাজিক সংক্রমণ দেখা দিতে শুরু করেছে, তেমনি সেটা ঠেকিয়ে রাখার জন্য ছুটি লকডাউনসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার।

করোনাভাইরাস: বাংলাদেশের জন্য ‘ক্রিটিক্যাল’ সময় এপ্রিল মাস (কোভিড-১৯)

 


তারপরেও রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হলে দীর্ঘদিন ধরে ভুগতে হবে। ৫ এপ্রিল আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, সংক্রমণের তৃতীয় স্তরে প্রবেশে করেছে বাংলাদেশ। কারণ ঢাকার টোলারবাগ ও বাসাবো, নারায়ণগঞ্জ, মাদারীপুর (শিবচর), গাইবান্ধা (সাদুল্লাপুর)-এসব এলাকায় 'ক্লাস্টার' বা গুচ্ছ আকারে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে।

এর আগে মার্চ মাসের শেষের দিকে তিনি জানিয়েছিলেন, সীমিত আকারে কমিউনিটিতে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ছে বলে তারা দেখতে পাচ্ছেন। ঢাকার বাইরের অনেকগুলো জেলাতেও করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছে। যাদের মধ্যে নারী, পুরুষ, শিশুসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ রয়েছে।

বুধবার আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, বাংলাদেশ এখন সংক্রমণের দিক থেকে তৃতীয় ও চতুর্থ স্তরের মাঝামাঝিতে রয়েছে। ভাইরাসটি কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়লেও সেটা এখনো ক্লাস্টার আকারে রয়েছে। সংক্রমণের প্রথম স্তর বলা হয়ে থাকে যখন দেশে কোন রোগী শনাক্ত না হয়। দ্বিতীয় স্তর বলা হয়, যখন বিদেশ ফেরতদের মাধ্যমে রোগী শনাক্ত হয়। তৃতীয় স্তর হচ্ছে সীমিত আকারে সমাজে রোগটি ছড়িয়ে পড়া।

বার্তা সংস্থা বাসসের খবর অনুযায়ী, মঙ্গলবার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের সময় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী প্রলয় সৃষ্টি করেছে। সারাবিশ্বে যেভাবে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের এখানেও বৃদ্ধি পাওয়ার একটা ট্রেন্ড আছে। তাতে আমাদের সময়টা এসে গেছে, এপ্রিল মাসটা। এই সময় আমাদের খুব সাবধানে থাকতে হবে।’

এপ্রিল মাসের শুরু থেকেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে শুরু করেছে।গতকাল বুধবার বাংলাদেশে নতুন করে ৫৪ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ৪১ জন। তার আগের দিন ছিল ৩৫ জন। গতকালও (৮ এপ্রিল) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য জানিয়েছে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর আগের দিন মৃত্যুর সংখ্যা ছিল পাঁচজন। দেশটিতে বুধবার পর্যন্ত কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২০ জন।

সামাজিক সংক্রমণ এড়াতে মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে পুরো নারায়ণগঞ্জ জেলাকে লকডাউন বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকার ভেতরেও বেশ কয়েকটি এলাকা লকডাউন বলে ঘোষণা করা হয়।লকডাউন করা এসব এলাকায় কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারবেন না। বুধবার থেকে লকডাউন করা হয়েছে কক্সবাজার জেলাকেও।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব এলাকায় একাধিক রোগী শনাক্ত হওয়ায় সংক্রমণ ঠেকাতে এসব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২৬ মার্চ থেকে যে সাধারণ ছুটি শুরু হয়েছিল, তা বাড়ানো হয়েছে এপ্রিলের ১৪ তারিখ পর্যন্ত। এ সময় সবরকম যানবাহন, নৌযান, বিমান ও রেল চলাচল বন্ধ রয়েছে। মানুষজনের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মাঠে কাজ করছে সেনাবাহিনীও।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদের এই এপ্রিল মাসটা খুব ক্রিটিক্যাল।’ তিনি বলছেন, ‘ঢাকা শহরেই বেশিরভাগ পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। নারায়ণগঞ্জেও বেশ কিছু রোগী পাওয়া গেছে। এরকম যেসব স্থানে বেশি রোগী পাওয়া গেছে, সেসব এলাকা লকডাউন করে রোগটি সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেটা যদি ঠিকভাবে করা যায় তাহলে আমরা বেঁচে যাবো।’

‘করোনাভাইরাস কন্ট্রোল করতে হলে সেটা এই এপ্রিল মাসের মধ্যেই করতে হবে। এর চেয়ে বেশি সময় দেয়া যাবে না। আমরা যদি সেটা করতে না পারি, ব্যর্থ হই, তাহলে অবস্থা খুব খারাপ হবে। তখন লম্বা সময় ধরে আমাদের করোনাভাইরাস পুষতে হবে। তাই এই এপ্রিল মাসটা খুব ক্রিটিক্যাল।’

তিনি বলছেন, এখন সবকিছু বন্ধ রয়েছে, সবাইকে ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যেও যদি রোগটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না হয়, তাহলে পরে আর নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তিনি বলেন, যে হারে রোগী শনাক্ত হচ্ছে, সংক্রমণের যেসব তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এক কমিউনিটি ট্রান্সমিশন (ব্যাপক জনগোষ্ঠীতে সংক্রমণ) বলতে বাধা নেই।

বাংলাদেশের মতো আর্থিক অবস্থার দেশ ভারতে চার সপ্তাহের পর থেকে রোগী বাড়তে শুরু করে। তবে বাংলাদেশে যেখানে ১৬টি কেন্দ্রে পরীক্ষা শুরু হতেই একমাস লেগে যায়, ভারতে সেটি করা হয় ৬২টি কেন্দ্রে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুন্সী বলছেন, ‘আমরা ৩০ দিনের দিনে যে অবস্থায় আছি, ব্রাজিল ১৫ দিনের দিন সেই অবস্থায় ছিল। মানে একশো দেড়শ রোগী শনাক্ত করার হচ্ছিল। আর ভারতেও এরকম ছিল ৪৫তম দিনের দিন।’

‘ব্রাজিলে সেই অবস্থা থেকে আজ রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার। আর ভারতে রোগীর সংখ্যা পাঁচ হাজারের কাছাকাছি। সুতরাং ভারতের সাথেও তুলনা করলে বোঝা যায়, আমাদের রোগীর সংখ্যা আগামী কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো কয়েক হাজারে পৌঁছে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে।’

চীন, ইতালি, স্পেন, যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এসব দেশে প্রথম দিকে করোনাভাইরাসে যে হারে রোগী শনাক্ত হয়েছে, চার সপ্তাহের পরপর পরিস্থিতির রাতারাতি অবনতি হয়েছে। রোগী সংক্রমণ ও মৃত্যু হারও অনেক বেড়ে গেছে। ‘পার্শ্ববর্তী দেশ হিসাবে - একই রকমের ভৌগলিক ও পরিবেশ, আচরণ অবস্থা বিবেচনায় - ভারতের সাথে তুলনা করলে, তাদের মতো ট্রেন্ড আমাদের এখানেও দেখা দিতে পারে’, বলছেন অধ্যাপক সাইফুল্লাহ মুন্সী।

তিনি সংশয় প্রকাশ করেন যে, সেরকম পরিস্থিতি সামলাতে প্রস্তুতির এখনো অনেক ঘাটতি আছে। ‘পরীক্ষা নিরীক্ষা যদি আমরা পূরণ করতেও পারি, পেশেন্ট ম্যানেজমেন্টের ব্যাপারটি নিয়ে - ঘাটতি যদি নাও বলি - এখনো আমাদের চিন্তার মধ্যে থাকতে হচ্ছে। কতটি ভেন্টিলেটর, কতটি আইসিইউ, কতটি হাসপাতাল অক্সিজেন থেরাপির জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত আছে, সেটা জানা গেলে আমাদের স্বাস্থ্য খাতের প্রস্তুতি বোঝা যাবে ‘

‘কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে চিকিৎসক বলেন, আইসিইউ বলেন, অক্সিজেন থেরাপি বলেন, এগুলো আসলে শেষ অস্ত্র। আমাদের প্রধান অস্ত্র হচ্ছে লকডাউন। সেটা আমরা যতভাবে করতে পারবো, স্বাস্থ্যখাতের ওপর ততোই কম চাপ পড়বে।’ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলছেন, ‘রোগী বাড়ার সম্ভাবনা যেহেতু আছে, তাই পেশেন্ট ম্যানেজমেন্টের ওপর জোর দেয়ার উচিত। শুধু করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের সেবার ব্যাপারে বিশেষ জোর দিতে হবে।’

রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের সাবেক পরিচালক ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উপদেষ্টা অধ্যাপক বেনজীর আহমেদ বলছেন, এখন যে রোগী শনাক্ত হচ্ছেন, যারা মারা যাচ্ছেন, তাদের কন্টাক্ট ট্রেসিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। তারা কাদের সঙ্গে মিশেছেন, কোথায় কোথায় গেছেন, কি করেছেন, তাদের বাড়িতে কে এসেছেন, কোন দোকানে গেছেন, সেগুলো বিশ্লেষণ করা, সেগুলো জানা দরকার।

‘এজন্য স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধিসহ সবাইকে নিয়ে টিম গঠন করা দরকার। সেই ঝুঁকি কমাতে কি ব্যবস্থা নেয়া দরকার, কাদের কোয়ারেন্টিন করতে হবে, সেগুলো ব্যবস্থা নেয়া দরকার।’ তিনি বলছেন, রোগের সংক্রমণ ঠেকাতে হলে লকডাউনের পাশাপাশি এসব দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। এর ফলে সংক্রমণের হারটা কমানো যাচ্ছে।

কিন্তু এসব বিষয় এখনো অনেক ঘাটতি রয়েছে বলে তিনি বলছেন। তিনি বলছেন, যারা শনাক্ত হচ্ছেন, তাদের ঠিকভাবে চিকিৎসা করা, সংক্রমিতদের সীমাবদ্ধ করে রাখার বিষয়টি জরুরি।

যারা হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছেন, নমুনা সংগ্রহ করছেন, তাদের প্রশিক্ষণ সুরক্ষার ব্যাপারগুলো নিশ্চিত করা জরুরি। না হলে হাসপাতালগুলো বা চিকিৎসকরা সংক্রমিত হতে শুরু করলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার জন্য অনেক হুমকি তৈরি করবে।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, ‘এখনো বাংলাদেশে কোভিড-১৯ বিস্তার ক্লাস্টার আকারে (ছোট ছোট গ্রুপের মধ্যে) রয়েছে। সেটা কমিউনিটি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে বলবো না। তবে কিছু কিছু রোগী আমরা পাচ্ছি, যাদের সংক্রমণের উৎস শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ছে।’

‘আমরা আসলে এটা ট্রান্সজিশন পিরিয়ডের ভেতরে রয়েছি। তৃতীয় স্তর থেকে চতুর্থ স্তরে (যখন ব্যাপক মানুষের মধ্যে সংক্রমণ দেখা দেয়) যারা লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি। কিন্তু সর্বোচ্চ স্তরে চলে গেছি সেটি আমি বলবো না।’ তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণ সবচেয়ে জরুরি। তারা যদি নিয়মকানুন মেনে বিচ্ছিন্ন থাকেন,ঘরে থাকেন, তাহলেই এটা রোধ করা সম্ভব হবে। 

খবর: বিবিসি বাংলা।

করোনাভাইরাস কোভিড-১৯